মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
|

মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানেন কি?

পোস্ট টি ভাল লাগলে শেয়ার করুনঃ

মুড়ি শুধু একটি সাধারণ খাদ্য নয়। এটি বাঙ্গালির সংস্কৃতি-গতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বজুড়ে সমাদৃত একটা অসাধারন খাদ্য । উপমহাদেশীয় মচমচে নাস্তা থেকে শুরু করে জাপানি মিষ্টি পর্যন্ত মুড়ির জনপ্রিয়তা বহুমুখীতারই প্রমাণ। আপনি জেনে অবাক হবেন যে আমাদের দেশের এই সাধারণ মনে করা খাবারটি গুনে মানে অনন্য। 

তাই আসুন এই আর্টিকেলে আমরা মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।  

মুড়ি কী?

মুড়ি, নাম থেকেই বোঝা যায় এটি এমন এক ধরনের চাল যা তাপের মাধ্যমে ফোলানো বা সম্প্রসারিত করা হয়েছে। তাই মুড়ি in english এ একে Puffed rice বলা হয়। চালকে বিশেষ পদ্ধতিতে তাপের মাধ্যমে ভাজার ফলে এটি তার আসল আকারের তুলনায় অনেক বড় হয়ে যায়। এটি উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপের মাধ্যমে তৈরি হয়, যার ফলে চালের দানা ফেটে গিয়ে ফেঁপে ওঠে। এই প্রক্রিয়াই চাল থেকে তৈরি হওয়া মুড়িকে তার স্বতন্ত্র হালকা ও ফুঁসফুঁসে গঠন প্রদান করে।

বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মুড়ি পাওয়া যায়। একটি হলো সাধারণ ও অপরটি হলো প্রক্রিয়াজাত করা মুড়ি। সাধারণ মুড়িকে কোনো অতিরিক্ত স্বাদ,মশলা বা মিষ্টি দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। স্বাস্থ্যগতভাবে  চিন্তা করলে সাধারণ মুড়িই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আকর্ষণীয় এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কীভাবে এত সাধারণ একটি খাদ্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এত উপকারী হতে পারে।

মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাঃ

মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ও অপকারিতা নিম্নে পয়েন্ট ও প্যারাগ্রাফ আকারে তুলে দরা হল।

মুড়ির উপকারিতাঃ

মুড়ি আমাদের দেশে সাধারণ নাস্তা হিসেবে প্রচলিত হলেও মুড়ির উপকারিতা অনেক। নিম্নে মুড়ির কিছু উপকারিতা উল্ল্যেখ করা হল। 

মুড়ি খাওয়ার ক্ষতি

মুড়ি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: 

মুড়ির অন্যতম প্রধান উপকারিতা হলো এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এতে থাকা উচ্চ মাত্রার ফাইবার উপাদান হজমশক্তি উন্নত করে এবং গাট বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। নিয়মিত মুড়ি খাওয়ার মাধ্যমে হজম সংক্রান্ত সমস্যা দূর করা যায়। ফাইবারে পরিপূর্ণ মুড়ি কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মলের মধ্যে থাকা মিউকাস এবং অতিরিক্ত ফ্যাটের পরিমাণ কমাতে এবং ফ্যাটকে অন্ত্রের প্রাচীরে আটকে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে। এর ফলে পেরিস্টালসিসের মুভমেন্ট বৃদ্ধি করার মাধ্যমে মল নিষ্কাশন সহজ ও মসৃণ হয়।

হজম শক্তি বাড়ায় মুড়ি:

 মুড়ি হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। মুড়ি হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য হওয়ায় এটি বিশেষ করে যাদের পেট হজমে সংবেদনশীল তাদের জন্য একটি উত্তম খাবার। এটি খাদ্য কণা গুলোকে কার্যকরভাবে ভাঙতে সাহায্য করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে। একটি শক্তিশালী হজম উদ্দীপক হিসেবে পরিচিত। মুড়ি পেট এবং অন্ত্রে খাদ্য কণাগুলো ভাঙতে সাহায্য করে, পাচক রসের নিঃসরণ বাড়ায় এবং এর মাধ্যমে অন্ত্র দ্বারা প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানেরশোষণ বৃদ্ধি করে।

এটি পেটের গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন পেট ফাঁপা, বদহজম, অম্বল, ডায়রিয়া, গ্যাস, পেপটিক আলসার এবং গ্যাসের ক্র্যাম্পের চিকিৎসায় সহায়তা করে।

 সারাংশঃ মুড়ি উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হজমশক্তি বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস, বদহজম, অম্বল ইত্যাদি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। এটি হালকা ও সহজে হজমযোগ্য। যা পাচক রসের নিঃসরণ বাড়িয়ে পেটের স্বাস্থ্য উন্নত করে।

মুড়ি ইমিউনিটি বাড়ায়: 

মুড়ি আমাদের শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতেও সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং সাধারণ সর্দি-কাশির মতো রোগ থেকে  আমাদেরকে সুরক্ষিত রাখে। 

মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ পদার্থের উচ্চ মাত্রা থাকায় মুড়ি ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে, জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং শরীরকে বিভিন্ন সংক্রমণ যেমন পেটের সংক্রমণ, জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে সুরক্ষা দিতে একটি অবিশ্বাস্যভাবে সাহায্য করে। যদিও এর উপরে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

 আরও পড়ুনঃ কাউন চালের উপকারিতা ও অপকারিতা

মুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে: 

মুড়ির আরেকটি উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মুড়িতে সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকায় এটি উচ্চ রক্তচাপযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারী। নিয়মিত মুড়ি খাওয়ার মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। কম সোডিয়ামযুক্ত মুড়ি সক্রিয়ভাবে রক্তচাপের মাত্রা স্বাভাবিক করতে এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি উচ্চ এবং নিম্ন রক্তচাপ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  খাবার হতে পারে। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে কার্ডিওভাসকুলার সহনশীলতা বাড়ায় এবং হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ব্লক, স্ট্রোক সহ অন্যান্য হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়। তবে মনে রাখতে হবে কোনোভাবেই সাধারণ মুড়ি কে  লবণ দিয়ে মুখরোচক ও সলটি  করা যাবে না।  এরকমটা করলে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখার বদলে রক্তচাপ বেড়ে যাবে। 

সারাংশঃ মুড়ি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। যা ইমিউনিটি বাড়ায় এবং সংক্রমণ থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়া কম সোডিয়ামযুক্ত মুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তবে লবণ দিয়ে মুড়ি খাওয়া উচিত নয়।

মুড়ি ওজন কমাতে সাহায্য করে: 

অনেকের মনেই প্রশ্ন  থাকে। মুড়ি কি ওজন কমাতে সাহায্য করে? বা ওজন কমায়? উত্তর হলো হ্যাঁ! মুড়িতে ক্যালোরির পরিমাণ কম এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি আমাদের পেটকে দীর্ঘ সময় পরি-পূর্ণ রাখে, যা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমায় এবং সেই সাথে Weight loss বা ওজন কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু মুড়ি হালকা এবং কম ক্যালোরিযুক্ত তাই ওজন কমানোর ডায়েটে থাকা ব্যক্তিদের জন্য একটি আদর্শ পছন্দ।

হাড় শক্তিশালী করে মুড়ি: 

এছাড়াও মুড়ি আমাদের শরীরের হাড় শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রাখে। নিয়মিত মুড়ি ভাজা খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা যায়।

মুড়ি ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন ডি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। যা হাড়ের কোষের সঠিক বৃদ্ধি এবং পুনর্জন্ম বা রি-জেনারেট হওয়া নিশ্চিত করে। 

সারাংশঃ মুড়ি কম ক্যালোরি ও উচ্চ ফাইবারযুক্ত হওয়ায় ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে। এছাড়া, এতে ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকায় হাড় শক্তিশালী করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

মুড়ি খেলে ত্বক ভাল থাকে:

 ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য মুড়ির উপকারিতা  বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুড়িতে থাকা পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে, ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে এবং আপনার ত্বককে উজ্জ্বল ও যৌবনদীপ্ত রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ইউভি-এ (UV-A) এবং ইউভি-বি (UV-B) রশ্মির কারণে ত্বকের অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দেয়। যার ফলে ত্বকে বলিরেখা, দাগ, সূক্ষ্ম রেখা, ডার্ক সার্কেল ইত্যাদি বার্ধক্যের লক্ষণগুলী হওয়ার ঝুঁকি কমে। এটি ব্রণ, ফুসকুড়ি এবং একজিমার মতো ত্বকের রোগের জন্যও অত্যন্ত কার্যকর। যদিও এর উপর বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।

মুড়ি কার্বোহাইড্রেটসের খুব ভাল উৎস:

মুড়ি একটি ভালো কার্বোহাইড্রেটসের উৎস, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। এটি ওয়ার্ক আউটের কাজে যাওয়ার আগে বা পরে খাওয়া যেতে পারে যাতে রক্তে গ্লাইকোজেনের লেভেল পুনরুদ্ধার হয় এবং পেশীকে শক্তি দেয়।

মুড়িতে কম সোডিয়াম থাকে:

মুড়িতে সাধারণত কম সোডিয়াম থাকে। বিশেষ করে যদি এটি নুনহীনভাবে প্রস্তুত করা হয়। এটি অনেক অন্যান্য  সোডিয়ামে পূর্ণ  প্যাকেজড স্ন্যাক্সের তুলনায় একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার। তাই উচ্চ রক্তচাপে  ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ  একটি খাবার বলে বিবেচ্য হয়।

সারাংশঃ মুড়ি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, বলিরেখা ও ব্রণ প্রতিরোধ করে। এছাড়া এটি কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস হিসেবে দ্রুত শরীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং কম সোডিয়ামযুক্ত বলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প খাবার বলে বিবেচিত।

মুড়ি কম ফ্যাট যুক্ত খাবারঃ


মুড়ি প্রাকৃতিকভাবে কম ফ্যাটযুক্ত।  মুড়ির প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৫ গ্রাম এবং প্রতি কাপে মাত্র ০.১ গ্রাম ফ্যাট থাকে। এটি উচ্চ ফ্যাটযুক্ত নাস্তার একটি দুর্দান্ত বিকল্প। যা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ এবং ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে পারে।

 মুড়ি কম ক্যালোরি  যুক্ত খাবারঃ


মুড়ি একটি কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার। সাধারণত ৩০ গ্রাম মুড়িতে ৮০.৪  কিলো ক্যালোরি  শক্তি থাকে। যা আমাদের দৈনিক ক্যালোরি সীমা অতিক্রম না করেই একটি দুর্দান্ত নাস্তার বিকল্প  হিসেবে পরিগণিত হয়। আমরা সকলেই জানি অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ ওজন বৃদ্ধির  অন্যতম কারণ। 

মুড়িতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার উপাদান থাকেঃ


কম ক্যালোরি থাকা সত্ত্বেও, মুড়িতে আশ্চর্যজনকভাবে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। ইউ.এস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার অনুযায়ী (u.s.d.a) প্রতি কাপ মুড়িতে প্রায় ২-৩ গ্রাম ফাইবার থাকে। ফাইবার আমাদেরকে পেটের পূর্ণতা বা তৃপ্তির অনুভূতি দেয়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে এবং ক্যালোরি ঘাটতি বজায় রেখে শরীরে সঞ্চিত ক্যালরি বার্ন হতে সাহায্য করে।

সারাংশঃমুড়ি কম ফ্যাট ও কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ ফ্যাটযুক্ত নাস্তার স্বাস্থ্যকর বিকল্প হল মুড়ি। এতে উচ্চ ফাইবার থাকায় পেট ভরা রাখে, অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে এবং ক্যালোরি বার্ন করতে সহায়তা করে।

মুড়ি বহুমুখী ব্যাবহার উপযোগী:

মুড়ি একটি বহুমুখী ব্যাবহার উপযোগী খাদ্য উপাদান যা বিভিন্ন খাবারের সাথে ব্যবহার করা যায়। যেমন নাস্তা, সিরিয়াল, স্ন্যাক্স, মিষ্টি খাবার এবং স্বাদযুক্ত খাবার ইত্যাদি খাবারের সাথে মুড়ি ব্যাবহার করা যায়। মুড়ি অন্যান্য খাদ্য উপাদান যেমন বাদাম, বিভিন্ন উপকারী বীজ, শুকনো ফল এবং মশলার সাথে মিশিয়ে তার স্বাদ এবং পুষ্টিগত মান বাড়ানো যেতে পারে।

মুড়ির পুষ্টিগুণ

মুড়ির পুষ্টিগুণঃ

ঐতিহ্যগতভাবে ভারত ও  বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটি খাদ্য হিসাবে মুড়িকে হালকা ও স্বাস্থ্যকর হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন মুড়ির প্রকৃত পুষ্টিগুণ কেমন? চলুন এবার একটু বিশদভাবে জেনে নেওয়া যাক।

মুড়ির পুষ্টিগত মানঃ

১০০ গ্রাম মুড়ি এবং প্রতি সার্ভিং (২০ গ্রাম) এর পুষ্টিগত মান নিচে দেওয়া হলো:

পুষ্টি উপাদানপ্রতি ১০০ গ্রামপ্রতি ২০ গ্রাম
ক্যালরি৪০২৮০.৪
মোট ফ্যাট০.৫ গ্রাম০.১ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট৯০ গ্রাম১৮ গ্রাম
ফাইবার১.৭ গ্রাম০.৩৪ গ্রাম
প্রোটিন৬ গ্রাম১.২ গ্রাম
ক্যালসিয়াম৬ মিলিগ্রাম১.২ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম২৫ মিলিগ্রাম৫ মিলিগ্রাম
আয়রন৩১.৭ মিলিগ্রাম৬.৩৪ মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ৬০.১ মিলিগ্রাম০.০২ মিলিগ্রাম
থায়ামিন০.২১ মিলিগ্রাম.০০৪ মিলিগ্রাম
রিবোফ্লাভিন০.০১ মিলিগ্রাম০.০০২ মিলিগ্রাম
নিয়াসিন৪.১ মিলিগ্রাম০.৮২ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম৩ মিলিগ্রাম০.৬ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম১১৩ মিলিগ্রাম২২.৬৮ মিলিগ্রাম

 তথ্য সূত্র

মুড়ি খাওয়ার অপকারিতাঃ

মুড়ির কিছু সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিচে দেওয়া হলো:

মুড়ি উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ধারী খাবারঃ


মুড়ির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি। যা বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে। এটি বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী বা যারা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ এটি সময়ের সাথে সাথে শক্তি হ্রাস বা ইনসুলিন রেজিসট্রেন্টের কারণ হতে পারে। তবে কম পরিমানে খেলে ডায়াবেটিসের রোগীদের উপর খুব প্রভাব পরে না।

মুড়িতে পুষ্টি উপাদানের পরিমান কমঃ


মুড়ি হালকা এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হলেও এতে ভিটামিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদন থাকলেও তা দৈনিক চাহিদার তুলনায় পরিমাণে কম। এটি প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ না করলে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে।

মুড়ির সাথে যোগ করা চিনি বা লবণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকরঃ


প্রসেসড মুড়ির নাস্তা (ঝাল মুড়ি) ও বিশেষ করে প্রি-প্যাকেজড মুড়িতে যোগ করা চিনি বা লবণ জোগ থাকে। এই সংযোজনগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই সাধারণ মুড়ির তুলনায় ঝাল মুড়ি বা প্রি-প্যাকেজড মুড়ি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়।

রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পারেঃ

যদিও মুড়িতে purine কম থাকে। তবুও অধিক পরিমাণে  মুড়ি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে রক্তে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হতে পারে। তাই অধিক পরিমানে মুড়ি না খেয়ে অল্প পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

ইউরিয়া যুক্ত মুড়ি খেলে কিডনি সমস্যা হয়ঃ

এছাড়াও ইদানিং কালে মুড়িকে বেশি পরিমাণে মুচমুচে ও  ফলানোর জন্য রাসায়নিক সার যেমন ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই বাজারের তৈরি মুড়ি পরিবর্তে নিজ বাসায় তৈরি করাই ভালো। কারণ রাসায়নিক সার ইউরিয়া যুক্ত মুড়ি খেলে কিডনি সমস্যা হতে পারে।

সারাংশঃ মুড়ি উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সতর্কতার সাথে ডায়েট চার্ট যোগকরা প্রয়োজন। কারণ এটি রক্তে glucose এর পরিমান দ্রুত বাড়াতে পারে। এতে পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ কম এবং প্রসেসড বা লবণ-চিনিযুক্ত মুড়ি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, ইউরিয়া যুক্ত মুড়ি কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই ঘরে তৈরি মুড়ি খাওয়া নিরাপদ।

শেষ কথাঃ

মুড়ি একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর খাদ্য। এটি একটি চমৎকার নাশতা। যা ত্বক মজবুত করা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সহায়তা করা এবং আমাদের হাড়কে শক্তিশালী করার মতো নানা উপকারে আসে।মুড়ি উপকারী উপাদানে পরিপূর্ণ কিন্তু এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই সামান্য। এটি আমাদের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত করা সম্ভব। আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য মুড়ি বেছে নেন বা খাবারে নতুনত্ব আনতে চান। মুড়ি আপনাকে নানাভাবে উপকৃত করবে। মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আমাদের পরিবেশনাটি কেমন লাগল কমেন্ট বক্সে অবশ্যই লিখে জানাবেন।

মুড়ি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

Faq

১ বাটি বা ২০ গ্রাম মুড়িতে ৮০.৪ কিলো ক্যালরি থাকে। 

Muri বা মুড়িকে ইংরেজিতে Puffed rice বলা হয়।

প্রতিদিন পরিমিত পরিমান যেমন ৫০-১০০ গ্রাম মুড়ি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। বেশী পরিমানে খেলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি।

বেশি পরিমানে খেলে মোটা হয় ও বা ওজন বাড়ে। কারন এতে কার্বোহাইড্রেট এর পরিমান বেশি থাকে। তবে পরিমিত খেলে সমস্যা হয় না। 

৪০২  কিলো ক্যালরির শক্তি থাকে।

খুবই অল্প পরিমান। প্রতি ১০০ গ্রামে মাত্র ০.৫ গ্রাম।

পরিমিত পরিমানে মুড়ি খেলে গ্যাস হয় না। বেশি পরিমানে খেলে গ্যাস হয়।

রাতের খাবার হিসেবে মুড়িকে  হালকা ও সহজপাচ্য, কম ক্যালোরিযুক্ত এবং গ্যাস বা অ্যাসিডিটি ও ওজন কমাতে সাহায্যকারী খাবার হিসেবে ধরা হয়। তবে স্বাস্থ্যকরভাবে খেতে চাইলে দই, ডিম বা সালাদের সঙ্গে মিশিয়ে এবং পরিমাণে কম করে খেতে পারেন।

পরিমিত পরিমাণে এবং পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে খেলে মুড়ি ওজন কমাতে সাহায্য করে। যেমনঃ ডিম, দই, ছোলা বা বাদামের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে প্রোটিন বাড়বে। এ ছাড়াও শসা, টমেটো বা গাজর যোগ করা ভালো।

হ্যাঁ। পরিমিত পরিমানে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

হ্যাঁ বাড়তে পারে। যদি মুড়ির সাথে বিভিন্ন ভাজা পোড়া ও মসলাদার তেল ও চাটনি যোগ করা হয় তবে মুড়ি খেয়ে ওজন কমার বদলে ওজন বাড়বে।

সকালে খালি পেটে মুড়ি খেলে সহজে হজম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। তবে এতে পুষ্টিগুণ কম থাকায় দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে না ক্ষুধার অনুভূতি হয়। প্রোটিন ও ফাইবার বাড়াতে দই, ছোলা বা ফলের সঙ্গে খাওয়া ভালো।

শুকনো মুড়ি খেলে সহজে হজম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা কমায়। তবে এতে পুষ্টিগুণ কম থাকায় দ্রুত ক্ষুধা লাগে।

মুড়ি খেলে সরাসরি কোলেস্টেরল বাড়ে না, কারণ এতে চর্বি কম থাকে। তবে বেশি তেল-মশলা দিয়ে খেলে তা কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে।

মুড়ি খেলে ইউরিক এসিড বাড়ে না, কারণ এতে purine কম থাকে। তবে অতিরিক্ত ভাজা বা মশলাদার মুড়ি খেলে শরীরের অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

মুড়ি খেলে সরাসরি চর্বি কমে না, তবে এটি কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় অতিরিক্ত ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাওয়া ও ব্যায়াম প্রয়োজন।

মুড়ি খেলে পেট বাড়ে না, তবে অতিরিক্ত মুড়ি খেলে ওভার ইটিংয়ের কারণে পেট ফুলতে পারে। সঠিক পরিমাণে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে খেলে পেট বাড়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

হ্যাঁ, ওজন কমাতে মুড়ি ভালো, কারণ এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে একটি স্বাস্থ্যকর নাস্তার বিকল্প।

1. https://www.netmeds.com/health-library/post/puffed-rice-the-incredible-benefits-of-adding-murmura-to-your-diet?srsltid=AfmBOorCYOtTKAWsGLv16ABzB6Rk2n2RUI4v8ijEoVzlRBgGGZzJMYPY

2. https://toneopfit.com/blogs/benefits-of-puffed-rice

3. https://www.truemeds.in/blog/puffed-rice

পোস্ট টি ভাল লাগলে শেয়ার করুনঃ

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *