কাউন চালের উপকারিতা ও অপকারিতা
কাউন একটি জাদুকরি বা সুপার ফুড শস্য। অত্যন্ত পুষ্টিকর এ সুপারফুডটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে এবং স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তিদের পছন্দের খাদ্য তালিকায় বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।
কাউন বিভিন্ন নামে পরিচিত যেমন থিনাই, কাঙ্গনি, কোররালু, এবং কাকুম। কাউন এর বৈজ্ঞানিক নাম Setaria italica. কাউন চাল in English বা ইংরেজিতে একে ফক্স টেইল ( Foxtail millet ) বলে। কাউন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাষ করা করা হয়। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। এটি লৌহ বা আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো প্রয়োজনীয় খনিজে সমৃদ্ধ। আমাদের পূর্ব পুরুষরা কাউন চালের উপকারিতা ‘র কথা না জেনেও বহু প্রাচিনকাল থেকে তা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করতেন। অবাক করা তথ্য হল, একটি সাম্প্রতিক জরিপ থেকে জানা যায় প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ তাদের খাদ্যের অংশ হিসেবে কাউন গ্রহণ করে থাকেন। কিনোয়ার মতোই কাউন চালের একটি সহজ বিকল্প।
চলুন কাউনের অসাধারণ কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানি এবং বোঝার চেষ্টা করি কেন এই অসাধারণ খাদ্য শস্যটি সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় পুষ্টিবিদ ও স্বাস্থ্য সচেতন ব্যাক্তিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

কাউন কোথায় চাষ হয়?
কাউন একটি সহনশীল ফসল যা বিভিন্ন আবহাওয়া এবং মাটিতে জন্মাতে পারে, তবে এটি সাধারণত আধা-শুষ্ক অঞ্চলে বা বেলে মাটিতে চাষ হয়। বিশেষ করে যেখানে অন্যান্য ফসলের বৃদ্ধি ঠিকমত হয় না সেখানে কাউন ভাল চাষ হয়।
কাউন প্রায় সারা বিশ্বজুড়েই চাষ হয়। বিশেষত এশিয়া, ইউরোপ,উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশেও চাষ করা হয়।
তবে এটি চীন, রাশিয়া, আফ্রিকা এবং ভারতের কিছু অংশে খুব ভাল চাষ হয়। ধারণা করা হয়, প্রায় ৪০০০ বছর আগে আফ্রিকা থেকে কাউন চীনের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান গুলুতে চাষ শুরু হয়ে, পরে এটি আমাদের উপমহাদেশ সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
কাউন চাষ পদ্ধতি জটিল না হলেও বাংলাদেশ এর উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে এর চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এর প্রায় সকল জেলায় কাউন চাষ হয়ে থাকে।
আয়ুর্বেদে কাউন এর গুরুত্বঃ
আয়ুর্বেদে কাউন ও অন্যান্য মিলেটসকে বলা হয় “ত্রিণধান্য” বা “কুধান্য”। ১৪ শতকে বিখ্যাত সুসেনা রচিত প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ “মহোদধি”-তে কাউন এর গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে কাউন মিষ্টি ও কষাযুক্ত স্বাদের হয়। আয়ুর্বেদের ভাষায় কাউন ভাত দোষ বাড়ায় কিন্তু পিত্ত, কফ এবং রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত দোষগুলিকে নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
কাউনের পূর্ণ পুষ্টিগুণ পেতে এটি অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করে খাওয়া প্রয়োজন। তবে আয়ুর্বেদ এর মতে কাউন কখনই দুধের সঙ্গে মেশানো উচিত নয়। কারন তা মারাত্মক হজমের সমস্যার কারণ হতে পারে।
কাউন চালের উপকারিতাঃ
কাউন চালের উপকারিতা অনেক। নিম্নে কাউন চালের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরা হলঃ

হার্ট এর জন্য কাউন ভালঃ
আমাদের শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না যদি হার্ট সুস্থ না থাকে। এটি শুধু রূপক অর্থে নয়, বাস্তব অর্থেও সত্য। হার্ট আমাদের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি (FSSAI) এর এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে। কাউন হার্ট এর জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি নিউরোট্রান্সমিটার,অ্যাসিটাইলকোলিন তৈরিতে সাহায্য করে। যা পেশী ও স্নায়ুর মধ্যে বার্তা বা সিগন্যাল স্থানান্তরে সহায়তা করে। সেই সাথে আমাদের হার্ট কে বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
কাউন ভিটামিন বি১২,পটাসিয়াম এবং প্রোটিনে সমৃদ্ধ হলেও শর্করার পরিমাণ অনেক কম। হার্ট কে সুস্থ রাখতে এটি খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী কাউন হার্ট এর স্বাস্থ্য রক্ষায় অনেক উপকারি। কাউনে থাকা উচ্চমাত্রার ডায়েটারি ফাইবার ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে,যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
এছাড়া, কাউনে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে আজকের দিনে হার্ট এর সমস্যা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মূল কারণ হলো ভাজাপোড়া ও জাঙ্ক ফুড গ্রহন, কাজের চাপ, অলস জীবনযাপন এবং অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর ও আনহেলথি লাইফ-স্টাইল।
হার্ট সুরক্ষার কয়েকটি উপায়:
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং পানীয় গ্রহণ।
- উচ্চ পুষ্টি ও ফাইবারযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
- নিয়মিত শরীরচর্চা করা।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা।
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা।
- মানসিক চাপমুক্ত জীবন-যাপন করা।
- সঠিক ডায়েট নির্বাচন করতে পারা।
কাউন উপরোক্ত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এটি রক্তের লিপিড প্রোফাইল উন্নত করতে, রক্তচাপ কমাতে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হার্টকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
কাউন কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত খাবার হওয়ায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। সেইসাথে এর উচ্চ আয়রন কন্টেন্ট রক্তনালীতে কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কাউনে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আসলে কাউন এর কম ক্যালোরি ও উচ্চ ফাইবার যুক্ত উপাদান ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। এছাড়া, কাউনে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। সর্বোপরি, এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

কাউন পুষ্টিতে ভরপুরঃ
কাউন আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন বি-এর মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। তাই কাউন আপনার শরীরকে পুষ্ট করতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। এক কাপ রান্না করা কাউন আপনার হাড়েকে মজবুত করতে, শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন এবং সামগ্রিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অনন্য ভূমিকা রাখে।
কাউন চাল কি ডায়াবেটিস রোগী খেতে পারেন?
হ্যাঁ কাউন ডায়াবেটিস রুগীরা খেতে পারবেন। যদি আপনি ডায়াবেটিসে ভুগে থাকেন তাহলে কাউন আপনার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। এর কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে এবং ধাপে ধাপে বৃদ্ধি বা স্পাইক করতে সাহায্য করে। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার।
আমাদের শরীর whole grain বা পুরো শস্য হজম করতে সময় নেয়। তাই কাউন প্রচসে-সড খাদ্য শস্যের মতো দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় না। কাউন একটি whole grain বা পূর্ণ শস্য এবং ভাতের একটি দুর্দান্ত বিকল্প খাবার। যা আমাদের:
- দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
- ক্ষুধার তীব্রতা প্রতিরোধ করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে দেয় না।
এর কম গ্লাইসেমিক উপাদান গ্লাইকোসাইলেটেড হিমোগ্লোবিন এবং রক্তে glucose বা শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
এটি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য একটি ভালো ভাতের বিকল্প খাবার। যদিও এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন, কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় এটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, কাউন রক্তে শর্করা কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।বিশেষ করে যারা glucose in tolerance এর সমস্যায় ভুগছেন।
এছাড়াও, কাউনের উচ্চ ফাইবার সামগ্রী রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, কারণ এটি শরীরে glucose বা শর্করার শোষণ ধীর গতির করে দেয়।
কাউন ওজন কমাতে সহায়কঃ
স্থুলতা বা মুটিয়ে যাওয়া বর্তমানে সুধু আমাদের দেশ নয় বিশ্বব্যাপী একটি মারাত্মক সমস্যা। এজন্য আমাদেরকে এমন খাবার খুঁজে বের করা উচিত যা ক্ষুধা নিবারন করে কিন্তু শরীরে চর্বি জমা হতে বাধা প্রদান করে। এই ক্ষেত্রে কাউন একটি কার্যকর বিকল্প খাবার। এতে ট্রিপটোফ্যান নামক একটি অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং উচ্চ পরিমাণে ফাইবার আছ। যা স্বাস্থ্যকর ভাবে ওজন বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাউন উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং কম গ্লাইসেমিক ও ক্যালোরি উপাদান সমৃদ্ধ। যা ওজন কমাতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প খাবার। এতে থাকা ট্রিপটোফ্যান নামক অ্যামিনো অ্যাসিড ক্ষুধার অনুভূতি কমায় এবং বিশেষ করে পেটের চারপাশের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
তাছাড়া, এটি একটি whole grain বা পূর্ণ শস্য, যা প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে, কিন্তু ক্যালোরির দিক থেকে বেশি নয়। যদিও এটি একটি ওজন কমাতে চাওয়া ব্যাক্তিদের জন্য রুটিন খাবারের সহায়ক অংশ হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম হল স্বাস্থ্যকর ও কাঙ্ক্ষিত ওজন অর্জন এবং বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।
সারমর্মঃ কাউন কম গ্লাইসেমিক সূচকধারি এবং উচ্চ আঁশ যুক্ত খাবার হওয়ায় ওজন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে উপকারী । তবে, থাইরয়েড সমস্যা বা শস্যে অ্যালার্জি থাকলে কাউন সাবধানে গ্রহণ করা উচিত।

কাউন হল প্রোটিনের পাওয়ারপ্যাকঃ
হেলদি ডায়েট নিয়ে চিন্তা করলে প্রোটিন নামক ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টকে বাদ দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। আর এই ক্ষেত্রে কাউন হতে পারে একটি চমৎকার বিকল্প ! এই শস্যে থাকা প্রোটিন সহজেই আমাদের শরীর শোষণ করতে পারে। যা প্রোটিনের প্রয়োজন মেটাতে খুবই উপযুক্ত।
তদুপরি, কাউনে রয়েছে বিভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড যা শরীরের বিভিন্ন বিপাকীয় বা মেটাবলিক কার্যকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কাউন ফ্রি র্যাডিক্যাল তৈরিতে বাধা দেয়ঃ
ভাল ডায়েটে বা খাবারের অভাব হোক বা অন্যান্য মানসিক ও শারীরিক চাপ আমরা প্রায়শই ফ্রি র্যাডিক্যালের সংস্পর্শে থাকি। এই অস্থিতিশীল অণুগুলি কোষের ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমনঃ ক্যান্সার।
এ ধরনের সমস্যার সমাধানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল অপরিহার্য উপাদান। কাউন ফেনোলিক যৌগ এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে ও নির্মূলকরতে সাহায্য করে এবং আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রন করেঃ
কাউন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজের খুব ভাল উৎস, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়াম রক্তনালীগুলি শিথিল করতে সাহায্য করে এবং রক্তকে সহজে শরীরের মধ্যে প্রবাহিত হতে দেয়।
পটাশিয়ামের সঠিক মাত্রার উপস্থিতি সোডিয়ামের নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাউন উচ্চ ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা কোলেস্টেরল কমিয়ে রক্তনালীর নমনীয়তা বাড়িয়ে রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
কাউন খারাপ কোলেস্টেরল কমায়ঃ
কাউন অ্যামিনো অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস যার মধ্যে লেসিথিন এবং মেথিওনিন রয়েছে। এগুলো লিভারে অতিরিক্ত চর্বি হ্রাস করে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া থ্রিওনিন নামক উপাদান ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করে যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা আরও কমিয়ে শরীরকে সুরক্ষিত রাখে।
কাউন কোলোরেকটাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়ঃ
কাউন কোলোরেকটাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এর উচ্চ ফাইবার সঠিক পাচনতন্ত্র এবং নিয়মিত মল ত্যাগে সহায়তা করে। কাউনে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা কোলন ক্যান্সারের বিকাশে বাধা দেয়।
এছাড়াও কাউন এর ফাইবার gut বা অন্ত্রের প্রোবায়োটিকের খাবার বা প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। gut বা অন্ত্রের স্বাস্থ্য শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং কোলোরেকটাল ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনার খাদ্যতালিকায় কাউন অন্তর্ভুক্ত করলে এটি gut বা অন্ত্রের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং সম্ভাব্য ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কাউন হজম প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়ঃ
আপনারা জানেন একটি স্বাস্থ্যকর বা অন্ত্র শরীরের সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। কাউন তার লঘু প্রকৃতির খাবার এবং অত্যন্ত সহজপাচ্য। এটি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য অন্ত্র-সংক্রান্ত জটিলতা ও সমস্যাগুলি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
একটি সুস্থ gut বা অন্ত্র প্রতিটা ব্যক্তির সামগ্রিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
যদি আপনি ভুগে থাকেন:
- কোষ্ঠকাঠিন্য
- ডায়রিয়া
- ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS)
- বা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যায়
তাহলে আপনার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যধিক প্রয়োজন। কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রচুর সবজির সঙ্গে কাউন গ্রহণ করুন।
লঘু ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আমাদের হজমক্ষমতা বাড়ানোর আরেকটি উপায় হল আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার গুণগত মান বৃদ্ধি করন।
মানুষের অন্ত্রে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে। এদের মধ্যে কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু খারাপ ব্যাকটেরিয়া। ভালো ব্যাকটেরিয়া খাবার হজমে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরকে শক্তি ও পুষ্টি দিয়ে পূর্ণ করতে সাহায্য করে।
পুষ্টিবিদদের মতে যার শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা যত বেশি তার স্বাস্থ্য তত ভালো। শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ানোর একটি ভালো উপায় হল তাদের পুষ্টি জোগানো।
কাউন-এ রয়েছে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ, যা প্রিবায়োটিকের মতো কাজ করে। রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ আমাদের পেটের অ্যাসিডের কঠিন বাধা গুলিকে সহজে অতিক্রম করে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়াদের কাছে পৌঁছে যায়। তাদের ভালোভাবে খাওয়ানো গেলে তারা আরও ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করে। ফলস্বরূপ, আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
প্রদাহবিরোধী গুণ থাকায় কাউন গ্যাস্ট্রিক মিউকোসা গুলুর স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়।
এখন আসি পরবর্তী বিষয়ে। সুস্থ্য পেট মানে সার্বিক সুস্বাস্থ্য। হজমের সমস্যা যদি সময়মতো মোকাবিলা না করা হয়। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যেতে পারে এবং ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম,তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া বা উভয়ের কারণ হতে পারে।
কাউন-এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা বাল্কিং প্রভাব তৈরি করে এবং অন্ত্রের সঞ্চালনকে সহজ করে তোলে। এটি মল ত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ ও মৃদু করে তোলে।

কাউন নার্ভাস সিস্টেমকে শক্তিশালী করেঃ
কাউনে থাকা উচ্চ পরিমাণের আয়রন এবং ভিটামিন বি১ নার্ভাস সিস্টেমের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি কিছু স্নায়ুক্ষয়জনিত রোগ, যেমন পারকিনসন্স ডিজিজ বা অ্যালঝাইমার্স এর মত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কাউন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
যদি আপনি আপনার সার্বিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি সুপারফুড খুঁজে থাকেন, তবে কাউন হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। কাউন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, বিভিন্ন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরকে অসংখ্য রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কাউন অন্তর্ভুক্ত করে আপনি সহজেই আপনার স্ট্যামিনা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারেন।
কাউনে থাকা সমৃদ্ধ পুষ্টিগুণ গুলি:
- আমাদের স্ট্যামিনা বাড়ায়
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং
- শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আছে যা একটি কার্যকর প্রাকৃতিক ইমিউনিটি বুস্টার হিসেবে পরিচিত।
কাউন কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করেঃ
আগেই জেনেছেন কাউনে লেসিথিন এবং মেথিওনিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড বিদ্যমান। এই অ্যামিনো অ্যাসিডগুলো খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং লিভারে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি হ্রাস করতেও কার্যকর। এর মানে, কাউন শরীর থেকে লিভারের চর্বি কমিয়ে লিভার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শরীরে ফাঙ্গাল বা ছত্রাক এর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে কাউনঃ
আমরা জেনেছি ফক্সটেইল মিলেট বা কাউন তার পুষ্টিকর উপাদান ইমিউনিটি শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এতে থাকা একটি অ্যান্টি-ফাঙ্গাল প্রোটিন মোলিকিউল বোত্রাইটিস সিনেরিয়া এবং অলটারনারিয়া অলটার্নাটা ফাঙ্গি বা ছত্রাক এর বিরুদ্ধে কার্যকরিতা প্রদর্শন করে। তবে এই দাবিগুলির সমর্থনে আরও ক্লিনিক্যাল গবেষণার প্রয়োজন আছে।
কাউন হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ
মজবুত হাড় সুস্থ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মজবুত হাড় আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গ ভাবে জীবনযাপন করতে সহায়তা করে। কাউন আপনার ডায়েটে যোগ করলে আপনি ভালো হাড়ের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারবেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে?
কাউন ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাসে ভরপুর। যা ভাঙা হাড়, আর্থ্রাইটিস এবং হাড় ক্ষয়ের মতো অবস্থাগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
কাউন হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে কারণ এতে রয়েছে:
- ফসফরাস
- ম্যাগনেসিয়াম
১০০ গ্রাম কাউনে আরও পাওয়া যায় ৩১ মিগ্রা ক্যালসিয়াম এবং ৮১ মিগ্রা ম্যাগনেসিয়াম।
এছাড়াও এতে রয়েছে হাড়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন:
- আয়রন
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন এ
- জিঙ্ক
এই উপাদানগুলো হাড়কে প্রাকৃতিক ভাবে শক্তিশালী করে এবং অভ্যন্তরীণ হাড়ের আঘাতের ঝুঁকি কমায়। আপনার খাদ্য তালিকায় কাউন অন্তর্ভুক্ত করলে bone density বা হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং অস্টিওপোরোসিসের মত মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
সারমর্মঃ কাউনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে যা এটিকে অন্য যে কোনো ডায়েটের থেকে মূল্যবান করে তুলেছে। এই পুষ্টিকর শস্য পাচন ও হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, রক্তে glucose এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল করে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
কাউন প্রাকৃতিকভাবে গ্লূটেন মুক্তঃ
যারা সিলিয়াক রোগ বা গ্লূটেন অ-সহিষ্ণুতা (intolarence) সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য কাউন একটি আশীর্বাদ! কেননা কাউন প্রাকৃতিকভাবে গ্লূটেন-মুক্ত এবং এটি ডায়েটরি ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টির দারুণ উৎস।
গ্লূটেন একটি প্রোটিন যা গম, যব এবং রাইয়ের মতো শস্যে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। তাই সেলিয়াক রোগ বা গ্লূটেন অ-সহিষ্ণুতা (intolarence) সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের এটি এড়িয়ে চলতে হয়। কারণ এটি পাচনতন্ত্রের ক্ষতিকর লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে, যেমন ডায়রিয়া এবং পুষ্টির শোষণে বাধা প্রদান। সেই দিক থেকে তুলনা করলে কাউন প্রাকৃতিক ভাবেই গ্লূটেন ফ্রি যা সেলিয়াক রোগ বা গ্লূটেন অ-সহিষ্ণুতা (intolarence) সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য উপকারী।
কাউন ত্বকের জন্য দারুণ উপকারিঃ
কাউন ত্বকের জন্য খুব উপকারী। কাউন কোলাজেন উৎপাদন করে। যা বার্ধক্যের প্রক্রিয়া ধীর করার মাধ্যমে শরীরে বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয়। সুতরাং যদি আপনি বলিরেখা বা স্ট্রিচমার্ক এড়াতে চান, এখনই কাউন খাওয়া শুরু করুন।
ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে কাউনঃ
কাউন ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। এটি ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজে সমৃদ্ধ যা স্বাস্থ্যকর ত্বক এবং চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিক্যালসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের অভাব ত্বকের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আগাম বার্ধক্য ঘটাতে পারে।
কাউনে থাকা ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান গুলি ত্বক এবং চুলের ফলিকলকে পুষ্টি প্রদান করার পাশাপাশি বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও প্রদান করে। তাই আপনি নিয়মিত কাউন খেলে পাবেন আরও স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল ত্বক এবং শক্তিশালী ও চকচকে চুল।
কাউন শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করেঃ
কাউন তার পুষ্টিগুণের জন্য অনন্য। কাউনে থাকে অত্যন্ত পুষ্টি উপাদান যেমন ফাইবার, মেথিওনিন, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং জিঙ্ক। এই রকম পুষ্টিতে পরিপূর্ণ খাদ্য শস্য সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এছাড়াও, এটি প্রোটিনের একটি ভাল উৎস। কাউনের প্রোটিন প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ১২.৩ গ্রাম প্রোটিন থাকে। যারা ভেজিটারিয়ান বা ভেগান ডায়েট অনুসরণ করেন তাদের জন্য কাউন আদর্শ প্রোটিনের উৎস। কারণ কাউন পেশী গঠন এবং মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে থাকে।
কাউন অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তির পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প খাদ্য উৎস।
কাউন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ
যদিও সব অঙ্গই আমাদের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে মস্তিষ্ক বা ব্রেইন হার্ট এর পরেই একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ অরগান । এটি আমাদের সব কাজ,অনুভূতি এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্র। তাই মস্তিষ্কের সুস্থতাকে আমাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এই কাউনে আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বি যেমন বি৬, বি১২, বি৯, বি৩ ইত্যাদি। এই ভিটামিনগুলো মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। ভিটামিন বি-এর অভাব হলে স্মৃতিশক্তি ও মানসিক কার্যক্ষমতার অবনতি ঘটে।
বিশেষ করে কাউন এ প্রয়োজনীয় মাত্রায় ভিটামিন B12 থাকে, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ভিটামিন B12 মস্তিষ্কের কোষের যোগাযোগ (নিউরো ট্রান্সমিশন) এবং বার্তা প্রেরণে সহায়তা করে। এই শস্য মেমোরি বা স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করে।
কাউনে আরও প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। স্নায়ুকোষের জন্য প্রয়োজনীয় নিউরোট্রান্সমিটার তৈরির উপাদান হল অ্যামিনো অ্যাসিড। যা মস্তিষ্কের যোগাযোগ বা নিউরো ট্রান্সমিশন এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
এছাড়াও এটি আলঝেইমারস এবং ডিমেনশিয়ার মতো মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। তাই সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য আপনার ডায়েটে কাউন অন্তর্ভুক্ত করুন।
শক্তির স্তর বা লেভেল বৃদ্ধি করে কাউনঃ
কাউন জটিল কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার, যা স্থায়ী শক্তির দুর্দান্ত উৎস। এই শক্তি-বৃদ্ধিকারী কার্বোহাইড্রেটগুলি ধীরে ধীরে ভাঙ্গে এবং শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি আমাদেরকে ক্ষুধা, ক্লান্তি এবং মেজাজের ওঠানামা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
এই শস্য রক্তে শর্করার পরিমাণ সমন্বয় করে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। সুষম ডায়েটের পাশাপাশি এই Whole grain শস্যটি খেলে শরীরে উচ্চ শক্তির লেভেল বৃদ্ধি পায়।
সারমর্মঃ কাউন অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর যা ব্রেইন ফাংসন উন্নত করার পাশাপাশি, নার্ভাস সিস্টেম কে শক্তিশালী করে,ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে, শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরে শক্তির লেভেল বৃদ্ধি করে।
কাউন অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুরঃ
কাউন ফাইটো-কেমিক্যাল নামে পরিচিত বিশেষ উদ্ভিদভিত্তিক উপাদানে ভরপুর । এই ফাইটো-পুষ্টি উপাদানগুলির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ কাউনে থকা ফ্ল্যাভোনয়েড এবং ফেনোলিকসের মতো ফাইটো-কেমিক্যাল শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা ক্ষতিকর অণু দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে।
কাউন প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে, যা কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। কোলাজেন ত্বকে বলিরেখা পরতে বাধা প্রদান করে। কাউন স্বাস্থ্যকর, উজ্জ্বল এবং বলিরেখামুক্ত ত্বক প্রদান করতে বিশেষ ভাবে কাজ করে।
কাউনের ভুষিযুক্ত অংশে সর্বাধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এর মানে, কাউন এমন একটি চমৎকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস, যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষ ও টিস্যুর ক্ষতি ও ফ্রি রেডিকেল প্রতিরোধ করে। শুধু তাই নয়, এগুলি আয়ু বৃদ্ধি করে, ত্বক ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং মস্তিষ্কে পুষ্টি জোগায়।
কাউনের পুষ্টিগুণঃ
Foxtail millet বা কাউনের ১০০ গ্রামের পুষ্টিগুণ নিম্নরুপঃ
উপাদান | মান (প্রতি ১০০ গ্রাম) |
এনার্জি ও পুষ্টি উপাদান |
এনার্জি | ৩৩১ কিঃক্যালরি |
খাদ্যআঁশ | ৮ গ্রাম |
চর্বি | ৪.৩ গ্রাম |
প্রোটিন | ১২.৩ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৬৩.২ গ্রাম |
আঁশ | ৬.৭ গ্রাম |
চিনি | ০.২ গ্রাম |
ভিটামিন সমূহ |
ভিটামিন এ | ৩২ মি.গ্রা |
ভিটামিন ই | ৩১ মি.গ্রা |
ভিটামিন বি১২ | ০.৪২ মাইক্রোগ্রাম |
নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩) | ৩.২ মি.গ্রা |
ফলিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৯) | ১৫ মি.গ্রা |
খনিজ উপাদান |
ক্যালসিয়াম | ৩১ মি.গ্রা |
পটাসিয়াম | ২৫০ মি.গ্রা |
সোডিয়াম | ৪.৬ মি.গ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮১ মি.গ্রা |
ফসফরাস | ২৯০ মি.গ্রা |
জিঙ্ক | ২.৪ মি.গ্রা |
আয়রন | ২.৮ মি.গ্রা |
কাউনের চালের অপকারিতাঃ
কাউন চালের উপকারিতা অনেক হলেও এর কিছু অপকারিতা ও আছে। শরীরে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। তাই কাউন গ্রহণের আগে সতর্ক হওয়া জরুরী।
কাউনে এলার্জি হতে পারেঃ
যদি কাউন গ্রহণের পর আপনার নিচের লক্ষণগুলো দেখা দেয়:
- চুলকানি বা গলা খুসখুস করে
- শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়
- শরীর ফুলে যায়
তাহলে অবিলম্বে আপনার চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। এটি আপনার শরীরের জন্য কেমন প্রতিক্রিয়া করে তা জানার জন্য গ্রহণের আগে একটি প্যাচ টেস্ট করে নিন।
থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কাউন গ্রহনে সতর্ক হনঃ
কাউনে গোইট্রোজেন বা গয়োট্রোজেন নামে এক ধরনের যৌগ রয়েছে যা থাইরয়েড কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। এটি গয়েটার সৃষ্টি করতে পারে এবং শুকনো ত্বক, উদ্বেগ, এবং ধীর চিন্তার মত উপসর্গও তৈরি করতে পারে।
তাই যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় যোগ করার আগে অবশ্যই তাদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
কাউন গ্রহনে কিডনিতে পাথর হতে পারেঃ
কাউনে থাকা অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। তাই এটি পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। যদি অস্বাভাবিক উপসর্গ বা পেটের নিচের দিকে ব্যথা অনুভূত হয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
এছাড়াও কাউন খেলে যা যা হতে পারেঃ
- কাউন অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে বেলচিং বা উদগিরন, গ্যাস বা অজীর্ণতার সমস্যা হতে পারে।
- আয়ুর্বেদ মতে, কাউন কখনো দুধের সাথে রান্না করা উচিত নয়, কারণ এটি গুরুতর বদহজম এবং ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত কাউন গ্রহণ করলে গুরুতর কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারজায়।
তবে কাউন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমানোর জন্য স্প্রাউটিং বা অংকুরিত কাউন খেলে কাউন এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া অনেকটায় কমানো যায়।
আপনি এটি নিজেও অংকুরিত করতে পারেন। এজন্য, ভেজানো কাউন একটি কাচের জারে রাখুন এবং একটি পরিস্কার কাপড় দিয়ে রাবার ব্যান্ডের এর সাহায্যে আটকিয়ে ঢেকে রাখুন।
জারটি উল্টো করে দিন, প্রতি ৮-১২ ঘণ্টা পর পর কাউন ধুয়ে ফেলুন। আপনি ২-৩ দিনের মধ্যে ছোট কাউনের অংকুর দেখতে পাবেন। অংকুর গুলি পরিস্কার করে ছেকে সঙ্গে সঙ্গে উপভোগ করুন।
খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য:
- আপনার স্প্রাউটিং কন্টেইনার বা পাত্র টি পরিষ্কার রাখুন।
- ফিল্টার করা বা বোতলজাত পানি ব্যবহার করুন (ট্যাপের পানি নয়)
- স্প্রাউট গুলি নিয়মিত ধুয়ে ফেলুন।
- স্প্রাউট গুলি সংরক্ষণ করার আগে অবশিষ্ট পানি ফেলে দিন।
- স্প্রাউট গুলি শীতল ও শুষ্ক স্থানে সংরক্ষণ করুন।
- তাদের শুকনো ভাব নিশ্চিত করতে ফ্রিজে রাখার আগে ৮-১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।
কাউন খাদ্যতালিকায় যোগ করার আগে অ্যালার্জি ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলির বিষয়ে সতর্ক থাকুন। আপনার শরীরের অনন্য পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ ও পুষ্টি গুণের সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে খাদ্যতালিকা পরিবর্তনের আগে একজন পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।
গর্ভাবস্থা ও কাওনের চালঃ
কাউনকে গর্ভবতী মায়দের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারফুড । এটি উচ্চ ফাইবারযুক্ত যা হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে এবং গর্ভাবস্থায় সাধারণ সমস্যা-কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
কাউন ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস ( যা প্রতি ১০০ গ্রামে ৮১মিগ্রাম থাকে)। যা স্বাস্থ্যকর হাড় বজায় রাখার পাশাপাশি, গর্ভাবস্থায় হওয়া খিঁচুনি বা প্রি-এক্লামসিয়া, প্রি-ট্রাম বার্থ এবং হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়াও, কাউনে উচ্চ পরিমাণে আয়রন, বি-ভিটামিন এবং ফলিক অ্যাসিড আছে। যা ভ্রূণের সঠিক বিকাশে সহায়ক এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
গর্ভবতী মায়েরা এটি তাদের খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন বিভিন্ন পদ্ধতিতে, যেমন:
- পায়েস
- স্প্রাউট বা অংকুরিত করে
- অথবা ভাতের বিকল্প হিসেবে।
এর পুষ্টিগুণের কারণে এটি মাতৃ ও ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি কম গ্লাইসেমিক সূচক ধারী খাবার বলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে থাকা মায়েদের জন্য এটি উপযুক্ত খাবার।
তবে মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থায় যেকোনো খাদ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, আপনার ডায়েটে পরিবর্তন আনার আগে সবসময় একটি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী বা পুস্তিবিদের সাথে পরামর্শ করা সবচেয়ে ভাল।
শেষ কথাঃ
কাউন চাল বা Kaun rice অনেক ভাল মানের খাদ্য এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সুস্থতা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউন একটি সুষম খাদ্যের আদর্শ উদাহরন হওয়ার পাশাপাশি, একটি টেকসই ফসলও বটে। কাউন চাষ করতে কম পানির প্রয়োজন, ফলে এটি পানি সাশ্রয়ী এবং ভোক্তা ও চাষিদের জন্য পরিবেশবান্ধব বিকল্প ফসল।
প্রাচীন কাল থেকেই আমাদের দেশে কাউনের চালের ভাত,কাউনের চালের পায়েস ও বিভিন্ন কাউনের চালের রেসিপি বেশ জনপ্রিয়। তাই আসুন কাউন চালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আর্টিকেল টি পড়ার পরে, জাঙ্কফুড এর জগত পরিহার করি। আসুন নীরোগ ও দীর্ঘ জীবন লাভের চেষ্টায় ভাল খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য পরিচর্যা করি।
কাউন চালের উপকারিতা সম্পর্কিত কিছু F.A.Q
এই তথ্য শুধুমাত্র শিক্ষা এবং সচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। এটি কোনও স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার দ্বারা চিকিৎসার বিকল্প নয় এবং কোনও মেডিকেল অবস্থার নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। তথ্যের যথাযথতা নির্ধারণের জন্য এবং কোন ঔষধ গ্রহণের আগে পাঠকদের একজন নিবন্ধিত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। pustibd.com তথ্যের সঠিকতা, পর্যাপ্ততা, সম্পূর্ণতা, বৈধতা, নির্ভরযোগ্যতা বা উপযোগিতা সম্পর্কিত কোনও গ্যারান্টি বা ওয়্যারেন্টি (স্পষ্ট বা উহ্য) সরবরাহ করে না; এবং এর উদ্ভূত কোনও দায়বদ্ধতা অস্বীকার করে।