খালি পেটে জিরা পানি খাওয়ার উপকারিতা
|

 জেনে নিন স্বাস্থ্যকর জিরা পানি তৈরির নিয়ম

জিরা পানি নামে কোমল পানীয় বাজারে বোতলে পাওয়া গেলেও এগুলান স্বাস্থ্যের জন্য ভাল না। তাই বাড়িতে তৈরি জিরা পানির বিকল্প নাই। তবে আমরা চাইলে খুব সহজেই কোন কেমিক্যাল ছাড়াই এই জিরা পানি বাসায় তৈরি করতে পারি।

আসুন স্বাস্থ্যকর জিরা পানি তৈরির নিয়ম সম্পর্ককিত পুরো পোস্টটি দেখে নিই।

জিরা পানি তৈরির নিয়মঃ

১ম ধাপঃ

জিরা পানি তৈরির জন্য প্রথমে আমাদেরকে জিরা টা একটু তাপ দিয়ে নিতে হবে। মৌরি বা মিষ্টি জিরা না জিরা পানি তৈরির জন্য লাগবে সধারন রান্নার জিরা। এবার তাপ দেবার জন্য প্যান বা কড়াই এ ২ টেবিল চামচ পরিমাণ জিরা খুব ভালো করে গরম করে নিতে হবে। আমাদের কে খেয়াল করতে হবে তাপটা জেন হাই থাকে। যখন দেখবেন জিরাগুলো গাড় বাদামী বর্ণ ধারন করেছে এবং তা থেকে খুব সুন্দর ফ্লেভার বের হচ্ছে। জিরা গুলোর কালার টা চেঞ্জ হয়ে গেছে এবং তখন বুঝতে হবে এটা ভাজা হয়ে গেছে। আবার খুব বেশি তাপে খুব বেশিক্ষণ ভাজবেন না কারন সেটা খেতে তিতা লাগবে

আরও পরুনঃ জানেন কি? কাঁঠালের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা কি?

জিরা পানি তৈরির নিয়ম


২য় ধাপঃ

এবারে একটা কুটনিতে ভাজা জিরা গুলান নিয়ে গুরা করে ফেলতে হবে। এই কাজটা কিন্তু আপনারা কুটনির বদলে শীল পাটা বা মিক্সার গ্রাইন্ডার এ ও জীরা গুলোন কে গুরা করতে পারেন।

জিরা পানি খাওয়ার নিয়ম

সুকনু জিরা ও গুরা করা জিরা পাশাপাশি রেখে দেখুন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে ডিফারেন্সটা কোথায়।

জিরা পানি কিভাবে খেলে ওজন কমে

৩য় ধাপঃ

এবার একটা বাটিতে কাঁচা মরিচ কুচি করে কেটে নিন, সাথে  ১ টেবিল চামচ পরিমাণ পুদিনা পাতা দিয়ে ছেঁচে নিন।

জিরা পানি খাওয়ার অপকারিতা

এইবার রসের পরিমাণ কম হওয়ায় এগুলো থেকে বেশি রস বের করার জন্য অল্প একটু পানি দিয়ে দিতে হবে । পানি দেয়ার পরে দেখতে পারবেন কত সুন্দর একটা গন্ধ বের হচ্ছে। এই কাঁচামরিচ ও পুদিনা পাতা এমন ভাবে ছেঁচতে হবে যেন মরিচগুলো থেকে সম্পূর্ণ ঝাল বের হয়ে আসে। জুসের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আরেকটু বেশি পরিমাণ পানি দিতে হবে। চিনামাটির পাত্র হলে ভাল হয়। তবে এটা শিলপাটা তেও করা যায়।


আরও পড়ুনঃমানবদেহে ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে কি হয়?

জিরা পানি কখন খেতে হবে

৪র্থ ধাপঃ

এবার এই ধাপে ২ লিটার ঠান্ডা পানি একটা কাঁচের অথবা প্লাস্টিকের জগের মধ্যে নিয়ে তাতে  সেছে নেওয়া পুদিনা পাতা ও মরিচের রস একটা ছাকনির মাধ্যমে ছেঁকে পানির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।

জিরা পানি উপকারিতা

তার পরে মেশাতে হবে ২-৩ চামচ জিরা গুরা, এবং ভালভাবে চামচ দিয়ে মিশায়ে নিতে হবে।

 এ পর্যায়ে মেশাতে হবে ৪-৫ চামচ তেতুল গোলানো রস অথবা তেতুলের মাড়। তেতুল নিজের সাধ মত বাড়ানো বা কমানো যেতে পারে।

জিরা পানি কি লিভারের জন্য ভালো

সবকিছু খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে দুই চা-চামচ লবণ দিয়ে দিতে হবে। এটা সাধারণ লবণ দিয়ে ও করতে পারেন তবে বিট লবণ দিলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে।তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ আছে তারা লবন পরিহার করতে পারেন।  

এ পর্যায়ে সবগুলো উপকরন ভাল ভাবে চামচ দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে নিতে হবে।

এইবার ছাকনির মাধ্যমে ছেকে কাচের গ্লাসে ঢেলে সুন্দর করে পরিবেশন করুন।

জিরা পানি খেলে কি রক্তচাপ বাড়ে

এই জিরা পানি কিন্তু শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তেঁতুল শরীর ঠান্ডা রাখে সেটা আমরা সবাই জানি। আবার যাদের হাই ব্লাড প্রেসার আছে তাদের জন্য তেঁতুল কিন্তু খুব ইফেক্টিভ। বিট লবন হজমে সাহায্য করে।

এই জিরা পানি শরবত ফ্রিজে দু তিন দিন রাখলে ও কোন সমস্যা হয় না। তাই আপনারা চাইলে বানিয়ে কিন্তু ফ্রিজে ও রেখে দিতে পারেন। আবার এমন ও করতে পারেন সকালে বানিয়ে ফ্রিজে রেখে  ফাস্টইং বা রোজার সময় ইফতারের আগে বের করে সাস্থ্যকর জিরা পানি দিয়ে রোজা খুললেন।

জিরা পানি খেলে কি ওজন কমে
all image and video credit: রুমানার রান্নাবান্না

শেষ কথাঃ

জিরা পানি তৈরির নিয়ম সম্পর্কিত পোস্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্ট সেকশনে জানান। আপনাদের সুচিন্তিত ও  পরামর্শ মূলক  মতামত আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে। 

জিরা পানি সম্পর্কিত সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

হ্যাঁ জিরা পানি কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি উপকারী। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তারা দুই বেলা জিরা পানি পান করতে পারেন।এই পানীয় গ্যাস  ও নিরাময় করে থাকে।

প্রতিদিন জিরা পানি পান করার স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে এসিডিটি বা গ্যাস নিরাময়ের মাধ্যমে  জিরা পানি  গাটের স্বাস্থ্যের উন্নতির পাশাপাশি বমি ভাব  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাছাড়াও রক্তের কোলেস্টেরল ও সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই উপকারী।

হ্যাঁ জিরা পানি পান করার মাধ্যমে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয়। বিশেষ করে  ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা ডায়েট কন্ট্রোল করছেন তাদের জন্য জিরা পানি অতুলনীয়।

জিরা পানিকে এক ধরনের ডিটক্স ওয়াটার বলা হয়। জিরা পানি শরীরের মেটাবলি জমে বিশেষ করে প্রোটিন কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট মেটাবলিজমে সাহায্য করার মাধ্যমে পেটের ফোলা ভাব বা ডিসপেপসিয়া  কমাতে সাহায্য করে।

যেকোনো ধরনের গুরুপাক ও কঠিন খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পরে হজম ক্রিয়া স্বাভাবিক করতে জিরা পানি খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তাই  নিঃসন্দেহে খাওয়ার পরেও জিরা পানি পান করা যেতে পারে।

যারা দীর্ঘদিন থেকে ঘুম কমজনিত সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে জিরা পানি অতুলনীয়। ঘুম কমে রোগী বা ইউসুমনিয়াতে আক্রান্ত রোগীরা নিয়মিত জিরা পানি পান করলে অনিদ্রা দূর হয় এবং ভালো ঘুম আসে।

জিরা পানি শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমাতে খুব সাহায্য করে। বিশেষ করে যারা মুটিয়ে গেছেন শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে আগ্রহী তাদের জন্য জিরা পানি অতুলনীয়  এক পানীয়। 

জিরা পানি রক্তচাপ রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই জিরা পানি রক্তচাপ বাড়ায় না বরং উচ্চ রক্তচাপ কমায়। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে জিরা পানি  তৈরি সময় লবণ পরিহার করাই ভাল।

জিরা পানি  মহিলাদের মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণে  বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত মাসিকের সময় হওয়া বিভিন্ন Apdominal ক্রাম্প প্রতিরোধ করে। এবং জরায়ু সংকোচনের মাধ্যমে অতিরিক্ত মাসিক হওয়া বন্ধ করে।

জিরা পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেলে শুকনো কাশিতে কিছু উপশম মেলে।

লিভার ডিটক্সিফিকেশন এর জন্য জিরা পানি অত্যন্ত কার্যকর। তাই লিভারের বিভিন্ন রোগে জিরা পানি পান করার মাধ্যমে উপসম লাভ করা সম্ভব।

গরমের সময় অনেক ধরনের পেটের পিরা দেখা যায়। জিরা পানি গ্রীষ্ম ও শরৎকালীন বিভিন্ন পেটের গোলযোগ বিশেষ করে যেগুলো অতিরিক্ত গরমের কারণে হয়ে থাকে সেগুলো প্রতিরোধ ও নিরাময়ে অনন্য ভূমিকা পালন করে। 

এই তথ্য শুধুমাত্র শিক্ষা এবং সচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। এটি কোনও স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার দ্বারা চিকিৎসার বিকল্প নয় এবং কোনও মেডিকেল অবস্থার নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। তথ্যের যথাযথতা নির্ধারণের জন্য এবং কোন ঔষধ গ্রহণের আগে পাঠকদের একজন নিবন্ধিত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। pustibd.com তথ্যের সঠিকতা, পর্যাপ্ততা, সম্পূর্ণতা, বৈধতা, নির্ভরযোগ্যতা বা উপযোগিতা সম্পর্কিত কোনও গ্যারান্টি বা ওয়্যারেন্টি (স্পষ্ট বা উহ্য) সরবরাহ করে না; এবং এর উদ্ভূত কোনও দায়বদ্ধতা অস্বীকার করে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *