মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা
|

আসুন জানি মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা কি?

মিষ্টি আলু দুর্দান্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। রাঙা আলু নামেও এ আলুর বেশ পরিচিতি আছে। মিষ্টি  আলুকে ইংরেজিতে sweet potato বলে । যার বৈজ্ঞানিক নাম Ipomoea batatas.

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ থাকে। মিষ্টি আলুর ক্যান্সার এবং রোগ প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য আছে।

মিষ্টি আলু স্বাদে মিষ্টি। সেদ্ধ মিষ্টি আলু খেতে বেশ মজাদার। এই মিষ্টি স্টার্চি কন্দগুলো প্রায় সারা বিশ্বেয় জন্মায়।

সাদা,কমলা,বেগুনি সহ নানা রঙের এবং নানান আকারের মিষ্টি আলু পাওয়া যায়।

ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ও ফাইবার সমৃদ্ধ এ আলু আপনার ডায়েটে সহজে যোগ করা যায়। তাই আসুন এই আরটিকেলে সুপার ফুড মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করি।

মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা (Misti alu benefits and side effects)

মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা (Health Benefits of Sweet Potatoes)

ভিটামিন এ এর অভাব রোধে মিষ্টি আলুঃ

বিশ্বব্যাপী ভিটামিন এ এর অভাব একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষত আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ভিটামিন এ এর অভাব  সবচেয়ে বেশি। এটির অভাবে শরীরে নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যেমনঃ সংক্রামক রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা লোপ, সংক্রামক রোগ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি, জেরোফথালমিয়া(শুকনো চোখ), গর্ভবতী ও স্তণ্যদানকারী মহিলা এবং তাদের শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি,রাত কানা রোগ। মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন- এ শরীরের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাবগুলো থেকে শরীরকে রোগ প্রতিরোধী ও শক্তিশালী করে তোলে । এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন। লিভারে গিয়ে বিটা ক্যারোটিন জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়। এক অনু বিটা ক্যারোটিন থেকে দুই অনু ভিটামিন এ তৈরি হয়ে থাকে। 

মিষ্টি আলুর উপকারিতা

ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করেঃ

মিষ্টি আলু বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর খুব ভাল উৎস। যেগুলো নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। 

অ্যান্থোসায়ানিনস নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রুপ বেগুনি মিষ্টি আলুতে পাওয়া যায়।  এক টেস্ট-টিউব গবেষণায় দেখা গেছে এটি মূত্রথলি, কোলন, পেট এবং স্তন ক্যান্সারের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে। 

আরেকটি ইঁদুরের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, বেগুনি বা পিংক রঙের মিষ্টি আলু খাওয়ানো ইঁদুরের ক্ষেত্রে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেকটায় কমে গেছে।

সামারিঃ মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন-এ ,বিটা ক্যারোটিন,অ্যান্থোসায়ানিন এর মত ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রুপ চোখের সমস্যা সহ ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেঃ

মিষ্টি আলু বিটা ক্যারোটিনের খুব ভালো একটি উৎস। এটি এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

এক কাপ (২০০ গ্রাম) খোসাসহ সিদ্ধ করা কমলা বা বেগুনি রঙের মিষ্টি আলু একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক প্রয়োজনীয় বিটা ক্যারোটিনের দ্বিগুণেরও বেশি সরবরাহ করে থাকে।

বিটা ক্যারোটিন শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয় এবং চোখের ভেতরের আলো শনাক্তকারী রিসেপ্টর তৈরি করতে কাজ করে। তবে হালকা কমলা রঙের মিষ্টি আলুর থেকে বেগুনি রংয়ের মিষ্টি আলুকে দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী বলে মনে করা হয়।

পুরনো একটি টেস্ট-টিউব গবেষণায় দেখা গেছে, এতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিনস চোখের কোষকে ক্ষতির  সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, যা সামগ্রিক চোখের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মানা হয়।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেঃ

বেগুনি মিষ্টি আলু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। একটি প্রাণী গবেষণায় দেখা গেছে, বেগুনি মিষ্টি আলুতে থাকা অ্যান্থোসায়ানিনস মস্তিষ্ককে স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম রাখতে পারে, কারণ এটি প্রদাহ কমায় এবং ফ্রি র‍্যাডিকেল দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্থোসায়ানিন-সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর নির্যাস গ্রহণ করলে প্রদাহের লক্ষণ কমে। 

তবে মানুষের ওপর এই প্রভাবগুলি পরীক্ষা করার জন্য এখনো অনেক গবেষণা  প্রয়োজন। তবে সাধারণভাবে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে ফল, সবজি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাদ্য মানসিক  স্বাস্থ্যের অবনতি এবং ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি ১৩%  পর্যন্ত কমাতে সক্ষম।

সামারিঃ মিষ্টি আলুতে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রুপ চোখের সমস্যা প্রতিরোধ করে ও ডিমেনশিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি ১৩%  পর্যন্ত কমাতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

বিটা ক্যারোটিনের প্রাকৃতিক সবচেয়ে সমৃদ্ধ উৎসগুলির মধ্যে কমলা রঙের মিষ্টি আলু একটি। এটি শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়।

ভিটামিন এ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে ভিটামিন এ-এর পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম  হলে মানুষ ঘন ঘন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়।

এটি বিশেষ করে ইনটেস্টটাইন ও পাকস্থলীর গায়ে স্বাস্থ্যকর শ্লেষ্মা ঝিল্লি বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ইনটেস্টটাইন বা অন্ত্র হল সেই স্থান যেখানে আপনার শরীর অনেক সম্ভাব্য রোগ সৃষ্টিকারী প্যাথোজেনের সংস্পর্শে আসে। তাই একটি হেলদি ইনটেস্টটাইন বা অন্ত্র একটি শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন এ ঘাটতি অন্ত্রের প্রদাহ বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঠিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

যদিও মিষ্টি আলু সরাসরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর কী প্রভাব ফেলে তা নির্ণয়ে কোনো গবেষণা হয়নি, তবে নিয়মিত এটি খেলে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি প্রতিরোধের  মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারে।

বাচ্চাদের মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতা

হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়ঃ

এন্ডোটেক্সট অনুযায়ী, মিষ্টি আলুতে থাকা প্রায় অর্ধেক ফাইবারই দ্রবণীয়। যা প্রকারান্তে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আমরা জানি উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই পর্যাপ্ত দ্রবণীয় ফাইবার গ্রহণ হার্টকে সুরক্ষিত রাখার একটি চমৎকার উপায়।

ফাইবার ছাড়াও, মিষ্টি আলু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, বিশেষ করে বিটা ক্যারোটিন। অনুযায়ী, বিটা ক্যারোটিন একটি প্রোভিটামিন এ—উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত রঞ্জক পদার্থ যা শরীরে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়। এটি মূলত কমলা, হলুদ এবং সবুজ রঙের খাবারে পাওয়া যায়, যেমন গাজর, ব্রকলি, টমেটো এবং মিষ্টি আলু।

২০১৮ সালে দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিকাল নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি খাওয়ার ফলে হৃদ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে গেছে।

ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে মিষ্টি আলু কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

সামারিঃ হেলদি গাঁট এবং হেলদি হার্ট এর জন্য মিষ্টি আলু বেশ গুরুত্ব পূর্ণ পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বহু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল। আধুনিক গবেষণাও সেই দিকেই ইঙ্গিত করে

ভিটামিন B6-এর খুব ভালো উৎসঃ

মিষ্টি আলু ভিটামিন B6 পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে, যা Pyridoxamine নামেও পরিচিত। ভিটামিন B6 আমাদের শরীরের বিপাক বা মেটাবলিজম ব্যবস্থাকে সচল রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, কো-এনজাইম্যাটিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে, হরমোনাল ব্যালান্স বজায় রাখে এবং লিভার বা যকৃতের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।

ভিটামিন B6-এর অভাব হলে ব্যক্তির মধ্যে বিরক্তি এবং স্বাভাবিক মানসিক ক্রিয়াকলাপে বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হলো রক্তস্বল্পতা, ডিমেনশিয়া এবং অ্যালজাইমার রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

ভিটামিন B6 স্নায়ুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ এবং এর অভাবে স্নায়ু-মনোবৈকল্য যেমন মৃগী এবং মাথাব্যথা রোগ হতে পারে। 

ভিটামিন সি এর সমৃদ্ধ উৎসঃ

মিষ্টি আলু এসকরবিক অ্যাসিডের একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা ভিটামিন সি নামে পরিচিত। আমাদের শরীরের পেরিস্টালসিস মুভমেন্ট বজায় রাখতে অত্যন্ত উপকারী। পেরিস্টালসিস মুভমেন্ট হল আমাদের পাচন বা হজম প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক গতি বজায় রাখার মাধ্যমে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে প্রবেশ করা যেকোনো পদার্থের চলাচলকে স্বাভাবিক রাখে। 

ভিটামিন সি-এর অভাব হলে বমি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগের প্রবণতা  বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। ভিটামিন সি স্কার্ভি রোগের চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণ ঠান্ডা বা সর্দি-জ্বরের উপসর্গগুলোর তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে।

মিষ্টি আলু ভিটামিন D-এর খুব ভাল উৎসঃ

মিষ্টি আলু ভিটামিন D-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস, যা আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের জমা এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভিটামিন D-এর অভাব হলে হাড়ের ঘনত্ব  বা বোন ডেনসিটি কমে যেতে পারে, যা হাড়ের খনিজ পরীক্ষা (Bone Mineral Test) দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।

ভিটামিন ডি ক্যান্সার, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, এবং মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস প্রতিরোধে এক ধরনের উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।  শরীরে ভিটামিন D-এর পর্যাপ্ত পরিমাণ ফসফরাস শোষণে ও সহায়ক  ভূমিকা রাখে। সূর্য হল ভিটামিন D সংশ্লেষণের প্রধান উৎস। তাই মিষ্টি আলু  সে সকল মানুষের জন্য অত্যন্ত উপকারী যারা সূর্যের আলোতে কম সময় ব্যয় করেন।

সামারিঃ মিষ্টি আলু ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন-ডি, ভিতামিন-সি এর খুব ভাল প্রাকৃতিক উৎস।

আয়রন বা লৌহের-এর ভালো উৎসঃ

মিষ্টি আলুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন বা লৌহ থাকে যা হিমোগ্লোবিন এবং লাল রক্ত কণিকা (RBC) গঠনে সহায়ক। RBC আমাদের রোগ প্রতিরোধ স্বাভাবিক রাখে, কারণ এগুলি আমাদের শরীরে প্রবেশ করা প্যাথোজেনের বিরুদ্ধে  আমাদের শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করে।

হিমোগ্লোবিন শরীরে অক্সিজেন বহনের প্রধান মাধ্যম। আয়রন অক্সিজেনের সঙ্গে মুভ করে এবং রক্ত যে লাল রঙের হয় তার মূল কারণ।

আয়রন বা লৌহের অভাবে রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) রোগ হয়।

উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেসিয়াম থাকেঃ

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। যা মানবদেহে স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বজায় রাখতে সহায়ক। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং শক্তি বিপাক ও প্রোটিন সংশ্লেষণের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িত।

ম্যাগনেসিয়াম মানবদেহে চতুর্থ সবচেয়ে পরিমানে থাকা খনিজ পদার্থ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-স্ট্রেস উপাদান হিসেবে মানব শরীরে কাজ করে। অনেক সময় গর্ভবতী দের লেগ ক্রাম্প বা মাংস পেশির খিঁচুনি দেখা যায় আর এই খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়াও এটি ৩০০টিরও বেশি এঞ্জাইম্যাটিক প্রতিক্রিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

jhuri bojhai misti alu

মিষ্টি আলু পটাসিয়ামের খুব ভাল উৎসঃ

মিষ্টি আলু পটাসিয়ামের খুব ভাল একটি উৎস। যা হৃদস্পন্দন, দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ এবং স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি মানবদেহে তৃতীয় সবচেয়ে থাকা খনিজ  উপাদান যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পটাসিয়াম কম থাকলে মানব শরীরে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, রক্তস্বল্পতা এবং মাথাব্যথার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এটি মানব শরীরে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকলাপ কে উদ্দীপিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

পটাসিয়াম একটি ভাসোডায়লেটর হিসেবে কাজ করে এবং মানব শরীরের রক্তনালী গুলীকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এটি রক্তের শর্করা লেভেল স্থিতিশীল করে এবং খিঁচুনি কমাতে সাহায্য করে।

মিষ্টি আলুতে কম সোডিয়াম এবং বেশি পরিমানে পটাসিয়াম সঠিক থাকে। যা মানব শরীরে রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

মিষ্টি আলুতে কলিন থাকেঃ

মিষ্টি আলুতে কলিন নামক পুষ্টি উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ঘুম, শেখার আগ্রহ, স্মৃতি শক্তি, পেশীর কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি প্রদাহ বা ইনফ্লামেসান কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং ফ্যাট বা চর্বি শোষণে সাহায্য করে।

এছাড়াও, কলিন কোষের ঝিল্লির গঠনে ভূমিকা রাখে এবং স্নায়ু সংকেত বা নিউরো সিগন্যাল কে নিউরো ট্রান্সমিশন এর মাধ্যমে প্রেরণে সাহায্য করে। মানব শরীরে কলিনের অভাবে অ্যালকোহল-মুক্ত ফ্যাটি লিভার (Non-Alcoholic Fatty Liver) হতে পারে।

সামারিঃ মিষ্টি আলু মানব শরীরের জন্য জরুরি কলিন,আয়রন,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম এর চমৎকার প্রাকৃতিক উৎস।

মিষ্টি আলু শরীরে প্রদাহ হতে বাধা দেয়ঃ 

মিষ্টি আলুতে এমন জৈব যৌগ রয়েছে যা শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি প্রদাহজনিত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করে যেমন-আর্থ্রাইটিস।
২০১৭ সালের একটি  প্রাণীর উপর গবেষণায় দেখা গেছে যে বেগুনি মিষ্টি আলুর রংয়ের এক্সট্র্যাক্ট প্রদাহ এবং স্থুলতার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

মিষ্টি আলুতে কলিন থাকে। এই পুষ্টি উপাদান টি পেশির গতিবিধি, শেখা এবং স্মৃতি বৃদ্ধি কোরতে সাহায্য করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দিপ্ত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

২০১০ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ মাত্রার কলিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণে অ্যাজমা আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণের হার সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করা ব্যক্তিদের থেকে অনেক বেশি। তবে উল্লেখ্য যে মিষ্টি আলুতে থাকা কলিন সাপ্লিমেন্টে থাকা কলিন এর তুলনায় অনেক কম।

 মিষ্টি আলু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধঃ

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল এমন যৌগ যা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর অভাবে দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন হৃদরোগ এবং ক্যান্সার হতে পারে। মিষ্টি আলু বেটা-কারোটিন, অ্যানথোসায়ানিন (বেগুনি প্রজাতিতে থাকে) এবং পলিফেনলসের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরে ক্ষতিকারক ফ্রি র‍্যাডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয়, সেই সাথে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করে।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে যে মিষ্টি আলু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এবং এটি বয়স বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বা অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। যা ত্বকের বলিরেখা দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

বেগুনি মিষ্টি আলু এই ক্ষেত্রে সাদা মিষ্টি আলুর তুলনায় আরও বেশী উপকারী। সম্প্রতি অনেক সেলিব্রিটি মিষ্টি আলু তাদের রেগুলার ডায়েটে রাখছেন এবং বেকড সেদ্ধ মিষ্টি আলুকে তাদের বয়স-প্রতিরোধী গোপন সিক্রেট হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

সামারিঃ মিষ্টি আলু শরীরে ইনফ্লামেসন কমায়, ফ্রি-রেডিক্যাল হতে বাধা দেয়। সেই সাথে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে থাকায় বয়সের ছাপ পরা বা এজিং ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস প্রতিরোধ করে।

চিনির শোষণ কমায় মিষ্টি আলুঃ

মিষ্টি আলু তার মিষ্টতার জন্য সুপরিচিত। তবে এটি কখনোই হাইপারগ্লাইসেমিক অ্যাটাকের জন্য দায়ী নয়ো। যা সাধারণত উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর দেখা দেয়। এর গ্লাইসেমিক লোড ১৭ যেখানে সাধারণ আলুর গ্লাইসেমিক লোড ২৯ যা হাইপারগ্লাইসেমিক অ্যাটাকের জন্য দায়ী।

হাইপারগ্লাইসেমিক বা ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি এবং কাজের প্রতি মনোযোগে সমস্যা হতে দেখা যায়। মিষ্টি আলুতে উচ্চ ফ্যাটের পরিমাণ থাকে, যা শরীরে চিনির শোষণ কমায়।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক মিষ্টি আলুঃ

মিষ্টি আলুতে ভাল মাত্রায় পটাসিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী। পটাসিয়াম রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এই দুই উপাদান একসঙ্গে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, যা সুস্থ কার্ডিও-ভাসকুলার সিস্টেম বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন পরামর্শ দেয় যে, সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চললে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক আংশে কমে যায়।

সামারিঃ মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক লোড মাত্র ১৭ তাই ডায়বেটিস রুগীদের জন্যও এটা নিরাপদ শর্করা জাতীয় খাবার। এছাড়াও মিষ্টি আলুতে পটাশিয়াম এর পরিমান বেশি থাকায় তা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

মিষ্টি আলু স্থুলতা বা মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ

বেগুনি মিষ্টি আলু প্রদাহ কমায় এবং শরীরে ফ্যাট বা চর্বির বৃদ্ধি রোধ করে। শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে, যা স্থুলতা বা মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধে কার্যকর  ভূমিকা পালন করে।

বাচ্চাদের মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতাঃ

৬ মাস বয়স থেকেই বাচ্চাদের মিষ্টি আলু খেতে দিতে পারেন। প্রথম দিকে পিউরি আকারে শুরু করতে হবে। শিশুকে মিষ্টি আলু খাওয়ালে নিম্নোক্ত উপকার গুলী পাওয়া যায়-

  • ভিটামিন এ -এর ঘাটতি কমানোর মাধ্যমে রাত কানা ও জেরোফথালমিয়া(শুকনো চোখ) রোগ প্রতিরোধ করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং সমাধান করএ যায়যায়।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • শিশুর রক্ত স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।

এছাড়াও মিষ্টি আলু উচ্চ ক্যালরি যুক্ত হওয়ায়, যেসব শিশুরা কম খেতে চায় তাদের কে অল্প খাওয়ায়েই অধিক পুষ্টি পাওয়া যায়। 

গর্ভাবস্থায় মিষ্টি আলু খাওয়ার উপকারিতাঃ

মিষ্টি আলু গর্ভবতী মায়েদের জন্য অতন্ত্য পুষ্টিকর একটি খাবার।কারণ এতে গর্ভবতী মায়েদের জন্য   প্রয়োজনীয় পুষ্টির মধ্যে ফোলেট পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে। ফোলেট হল গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যা শিশুর নিউরাল টিউব গঠনে সাহায্য করে এবং কিছু জন্মগত ত্রুটি বা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মানো প্রতিরোধ করে।

গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি, মিষ্টি আলুর মধ্যে বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ মায়ের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই দরকারি।

সামারিঃ যারা ওজন কমানোর জন্য চেষ্টা করছেন তাদের জন্য মিষ্টি আলু খুব ভাল মানের খাবার হতে পারে। সেই সাথে ৬ মাস বয়স থেকে শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার হিসেবে আদর্শ।

মিষ্টি আলু ও ডায়াবেটিসঃ

মিষ্টি আলু রক্তে শর্করা বা blood glucose level স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। কারণ মিষ্টি আলুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম এবং অন্যান্য খাবারের মতো রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ায় না।

একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে মিষ্টি আলু টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

ত্বকের যত্নে মিষ্টি আলু (Misti alu benefits for skin)


মিষ্টি আলুর ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ করে, ভিটামিন A এবং ভিটামিন C ত্বকের স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে সহায়তা করে। ভিটামিন A কোষের ম্যাচিউরিটি এবং রি- জেনারেটিং প্রক্রিয়া উন্নত করে যা ত্বককে মসৃণ এবং তারুণ্যদীপ্ত রাখে। ভিটামিন C কোলাজেন উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য, আর  কোলাজেন ত্বকের  মসৃণতা এবং দৃঢ়তা বজায় রাখে।

মিষ্টি আলুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি ফ্রি র‍্যাডিক্যাল এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ও বাইরের কেমিক্যাল যুক্ত ধুলাবালি দ্বারা ত্বকে সৃষ্ট ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করে।

মিষ্টি আলুর পুষ্টিগুণঃ

নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রামে মিষ্টি আলুর পুষ্টি উপাদান বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হলঃ

পুষ্টি উপাদানবাদামি রঙ্গের মিষ্টি আলুপিংক রঙের মিষ্টি আলু
এনার্জি (Kcal)১০৮.৯১০৮
কার্বোহাইড্রেট (g)২৪.২৫২৪.৯৩
মোট ডায়েটারি ফাইবার (g)৩.৯৯৩.৯৪
ফ্যাট (g)০.২৬০.৩৩
প্রোটিন (g)১.৩৩১.২৭
থাইয়ামিন(mg)০.০৭০.০৬
রিবোফ্লাভিন (mg)০,০৪০.০৪
নিয়াসিন (mg)০.৬৭০.৬৯
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (mg)০.৮৯০.৫৬
মোট ভিটামিন বি৬ (mg)০.১২০.১৯
বায়োটিন (µg)৫.১৯৫.৭১
টোটাল ফলেট (µg)১৫.৬২১৪.৪৪
টোটাল ভিটামিন সি (µg)১৭.৯৪২২.২
ফাইলকুইনন  (µg)৩.৫
লুটেইন (µg)২৮২২০৮
জিএক্সানথিন (µg)১৪৬১৩৩
বিটা ক্যারোটিন (µg)৫৩৭৬১১.১২
টোটাল ক্যারেটোনয়েড (µg)৮৬৮৩৯৫.৯৩
ক্যালসিয়াম (mg)২৭.৫২৮.৯৩
ম্যাগ্নেসিয়াম (mg)১৭.৩৭২১.০৫
ফসফরাস (mg)৪২.৯৬৩৭.৬
পটাশিয়াম (mg)৩৪৫৩২৯
সোডিয়াম (mg)২৯.৬২৯.০৪
টোটাল স্টার্চ (g)১৮.৮২১৯.৮৮
মুক্ত সুগার (g)৩.৬৩৪.০৩
স্যাচুরেটেড ফাটি এসিড (mg)৬৬.১১০১
P.U.F.A (mg)১১৬১৮০
টোটাল অক্সালেট (mg)১৪.৩৯১৪.১৪
সাইট্রিক এসিড (mg)১৫.৬৬২৫.৬৯
সাকসিনিক অ্যাসিড (mg)৬৫২৩৩৪
টোটাল পলিফেনলস (mg)৬.৬৯১১.৭৪
ফাইটেট (mg)৫৪.০২৬৩.৬৯

source

মিষ্টি আলু খাওয়ার অপকারিতাঃ

মিষ্টি আলু অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করলেও কিছু মানুষের জন্য এটি কম করে খাওয়া বা পুরোপুরি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অ্যালার্জি ঝুঁকি:

যদিও বিরল, তবে মিষ্টি আলু খাওয়ার পরে কিছু কিছু মানুষের অ্যালার্জি হতে পারে। এ ধরনের অ্যালার্জির লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • চুলকানি
  • বমি বমি ভাব
  • বমি
  • পেট ব্যথা বা ক্র্যাম্প
  • শরীরের কোনো অংশ ফুলে যাওয়া

যদি মিষ্টি আলু খাওয়ার পরে এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে মিষ্টি আলু খওয়া পরিহার করতে হবে।

কিডনি স্টোন বা পাথরির ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারেঃ

মিষ্টি আলুতে অক্সালেটের পরিমাণ বেশি থাকে। যা ক্যালসিয়াম অক্সালেট তৈরির মাধ্যমে কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। তবে মিষ্টি আলুকে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন চিজ বা দইয়ের সঙ্গে খেলে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এটি ক্যালসিয়াম এবং অক্সালেটকে পরিপাকতন্ত্রে একে অপরের সঙ্গে আবদ্ধ হতে সাহায্য করে। ফলে কিডনিতে স্টোন গঠনের সম্ভাবনা কমে যায়।

অতিরিক্ত খেলে ত্বক কমলা হয়ে যেতে পারেঃ

মিষ্টি আলুর অন্যতম বড় পুষ্টি উপাদান হল এতে ভিটামিন A-এর উপস্থিতি। তবে মিষ্টি আলু অতিরিক্ত পরিমানে খেলে ত্বক হলুদ-কমলা রঙ ধারণ করতে পারে। তবে এটি ক্ষতিকারক নয় শরীরের এই অবস্থাকে ক্যারোটিনোডার্মিয়া বলা হয়। ভিটামিন A সমৃদ্ধ খাবার থেকে কিছু দিন দূরে থাকলেই এটি ভাল হয়ে যায়।

মিষ্টি আলু সঠিক খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়া উচিতঃ

মিষ্টি আলুর সাথে শাক বা সবজি আকত্রে মিলিয়ে খাওয়া যায়। সেইসাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য প্রচুর পানি পান  করতে হবে। যদি কোনো উদ্বেগ থাকে, তবে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

মিষ্টি আলুতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, যদি এটি পটাশিয়াম বাড়ানো ঔষধ (যেমন বেটা-ব্লকার) এর সঙ্গে খাওয়া হয়, তবে অতিরিক্ত পটাশিয়ামের কারণে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত রুগিদের পরিহার করায় ভাল

যাদের কিডনি সঠিকভাবে কাজ করে না, তাদের মিষ্টি আলু এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ কিডনি ঠিকমতো পটাশিয়াম শরীর থেকে বের করতে না পারলে শরীরে উচ্চ পটাশিয়াম জমা হতে থাকে, যা ক্ষতিকারক।

আরও পড়ুনঃ আপনি জানেন কি? শাক আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা !

হাইপারভিটামিনোসিস A হতে পারে

মিষ্টি আলুতে থাকা বিটা-ক্যারোটিন অতিরিক্ত গ্রহণ করলে লিভারে ভিটামিন A জমা হয়ে হাইপারভিটামিনোসিস A হতে পারে। যদিও এটি ক্ষতিকারক নয়, তবে ত্বক এবং নখ কমলা হয়ে ভয়ের সৃষ্টি করতে পারে।

উচ্চ কার্বোহাইড্রেট যুক্ত উপাদান থাকে

 মিষ্টি আলুতে প্রচুর কার্বোহাইড্রেট  বা শর্করা রয়েছে। ফলে কার্বোহাইড্রেট  বা শর্করা  লিমিট করা বা ডায়েটে থাকা ব্যক্তিদের এটি বেশি খাওয়া  উচিত নয়।

পেট ফাঁপা,পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারেঃ

মিষ্টি আলু কিছু মানুষের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারে। যারা এই খাবারের প্রতি সংবেদনশীল, তাদের ক্ষেত্রে এটি পেট ফাঁপা, পেট ব্যথা এবং ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

সুতরাং বুঝা যায় পরিমিত পরিমাণে  মিষ্টি আলু খেলে শরীরের জন্য তা উপকারী। এই সমস্যাগুলি সাধারণত মিষ্টি আলুর মধ্যে থাকা কিছু যৌগের প্রতি শরীরের অতিসংবেদনশীল প্রতিক্রিয়ার ফলে ঘটে। এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে মিষ্টি আলুর পরিমাণ কমিয়ে বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।

সামারিঃ মিষ্টি আলুর অনেক গুন থাকলেও কিছু কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকায় কিডনি রোগে আক্রান্ত রুগী বা যাদের কিডনি পাথরি হওয়ার ঝুকি আছে এমন রুগীদের এড়িয়ে চলাই ভাল। এছাড়াও বেশী পরিমানে খেলে অ্যালার্জি সহ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে

মিষ্টি আলু খাওয়ার নিয়মঃ

আপনার খাদ্যতালিকায় খুব সহজেই মিষ্টি আলু যোগ করবেন।
এগুলি খোসাসহ বা খোসা ছাড়িয়ে খাওয়া যায়। বেক, সেদ্ধ, রোস্ট, স্টিম বা প্যান এ রান্না করা যায়।

মিষ্টি আলুর প্রাকৃতিক মিষ্টত্বা বিভিন্ন রকমের মশলার সাথে ভালোভাবে মিলে যায়। এগুলি খুবই মজাদার ও মিষ্টি ও পুষ্টিকর।

মিষ্টি আলু উপভোগ করার কয়েকটি জনপ্রিয় উপায় নিম্নরুপঃ

  • মিষ্টি আলুর চিপস: খোসা ছাড়িয়ে পাতলা স্লাইস করে বেক করতে হয়।
  • মিষ্টি আলুর ফ্রাই: খোসা ছাড়িয়ে ওয়েজ বা ম্যাচস্টিক আকারে কেটে বেক করতে হয়। 
  • মিষ্টি আলুর টোস্ট: পাতলা স্লাইস করে টোস্ট করে,বাদাম, মাখন বা অ্যাভোকাডোর মতো উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হয়।
  • ম্যাশড মিষ্টি আলু: খোসা ছাড়িয়ে সেদ্ধ করে দুধ ও মশলা দিয়ে ম্যাশ করে খাওয়া যায়।
  • বেক করা মিষ্টি আলু: আস্ত মিষ্টি আলু ওভেনে বা চুলায় বেক করে মিষ্টি আলু খাওয়া যায়।
  • মিষ্টি আলুর হ্যাশ: খোসা ছাড়িয়ে কেটে পেঁয়াজ ও মরিচের সাথে প্যানে রান্না করা।
  • স্পাইরাল মিষ্টি আলু: সর্পিল আকারে কেটে স্যুপ করে সস মিশিয়ে পরিবেশন করা যায়।

মিষ্টি আলু সামান্য ফ্যাট যেমন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, বা অ্যাভোকাডোর সাথে রান্না করলে বিটা ক্যারোটিনের শোষণ বাড়তে পারে কারণ এটি একটি ফ্যাটে-দ্রবণীয় পুষ্টি উপাদান।

যদিও কিছু পুরনো গবেষণায় দেখা গেছে রান্না করার ফলে মিষ্টি আলুর বিটা ক্যারোটিন সামান্য কমে। তবে এটি কমপক্ষে ৭০% বিটা ক্যারোটিন ধরে রাখে।

শেষ কথাঃ

মিষ্টি আলু খুবই পুষ্টিকর ও লোভনীয় খাবার হিসেবে বহু প্রাচীন কাল থেকে মানুষ এর কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে জাঙ্ক-ফুড এর আগ্রাসনে তথাকথিত আধুনিক সমাজের মানুষ পুষ্টিকর এই খাবার কে খাদ্য তালিকা থেকে দূরে রেখেছে। তাই আসুন মিষ্টি আলুর পুষ্টিকর দিকের কথা ভেবে এই সুপার ফুড কে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখি এবং সু-স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু লাভ করি। মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত আমাদের লেখাটি কেমন লাগল তা কমেন্ট বক্স এ জানতে ভুলবেন না। আপানাদের সুচিন্তিত মতামত ও পরামর্শ আমাদের আগামি দিনের কাজের অনুপ্রেরনা হয়ে থাকবে।

F.A.Q

মিষ্টি আলুর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সাধারন কিছু প্রশ্ন ও উত্তর

কার্তিক মাস বা মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর মাসে মিষ্টি আলু চাষাবাদ হয়। এবং নভেম্বর মাসের শেষ থেকে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে মিষ্টি আলু পাওয়া যায়।

বাদামি রঙ্গের মিষ্টি আলুতে ১০৮.৯ কিঃ ক্যালরি ও পিংক রঙের মিষ্টি আলুতে ১০৮ কিঃ ক্যালরি এনার্জি থাকে।

হ্যাঁ, মিষ্টি আলু আপনার কাংখিত ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। কিন্তু অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধিতে বাধা প্রদান করে।মিষ্টি আলু পুষ্টিগুণে ভরা এবং এতে ক্যালোরির পরিমাণও বেশি। মিষ্টি আলু কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, ভিটামিন এবং পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।

পরিমিত পরিমানে খেলে কোন গ্যাস বা পেটের অনান্য সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। কিন্তু বেশি পরিমানে খেলে বদহজম ও পেটে গ্যাস হতে পারে।

হ্যাঁ, মিষ্টি আলু প্রতিদিন খাওয়া যাবে। এটি ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবারের খুব ভাল উৎস এবং সুষম খাদ্যের পরিপুরক অংশ। তবে কিডনি পাথরের রুগীদের ক্ষেত্রে পরিহার করায় স্রেয়।

প্রতিদিন মাঝারি সাইজের বা ১০০ গ্রাম ওজনের একটি মিষ্টি আলু খাওয়া খাওয়া উচিত।

হ্যাঁ যারা ওজন কমাতে চান তারা মিষ্টি আলু খেতে পারেন। কারন মিষ্টি আলু তে প্রচুর ফাইবার থাকে যা হজম হতে সময় নেয়। ফলে মিষ্টি আলু খেলে ক্ষুধা কম লাগে কম খাওয়ার ফলে শরীর ওজন বাড়ে না কিন্তু শরীরে শক্তি ও পুষ্টি অক্ষুন্ন থাকে।

সুধু মিষ্টি আলু নয় যেকোনো উচ্চ খাদ্য মান যুক্ত খাবার একবারে বেশি পরিমানে খাওয়া উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারন মিষ্টি আলুতে থাকা শর্করা আচমকা শরীরে রক্তের শর্করা ও বৃদ্ধি করতে পারে।  

মিষ্টি আলু কে সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন এবং ফাইবার থাকে। মিষ্টি আলু ওজন কমানোর জন্য চমৎকার বিকল্প এবং প্রধান খাবারের পরিবর্তে খাওয়ার জন্য সকালের খাবার হিসেবে আদর্শ বলে মানা হয়। 

মিষ্টি আলু সকালের নাশতা হিসেবে এবং বিকল্প খাবার হিসেবে জনপ্রিয় হলেও খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। মিষ্টি আলুতে থাকা আঠালো এবং ট্যানিন নামক অরগানিক রাসায়নিক থাকায় পাকস্থলির দেয়ালকে উত্তেজিত করে এবং প্রচুর পরিমাণে গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। যা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। এটি আনারসের মতোই খাবারের পরে খাওয়া ভালো।

না। মিষ্টি আলুতে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও প্রচুর পরিমাণে উপকারী ফাইবার থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী খাবার। তবে তা পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার শ্রেয়।

মিষ্টি আলু বছরের নির্দিষ্ট সময় পাওয়া যায়। তাই মিষ্টি  আলু প্রাপ্তি সাপেক্ষে বা বিকল্প সংরক্ষণ পদ্ধতিতে পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত খাওয়া উচিত।

না চিনির পরিমাণ খুব বেশি নয় খুব সামান্য পরিমাণে চিনি থাকে। তবে তা সাধারণ সাদা চিনির মত ক্ষতিকর নয় বরং তা ধীরে ধীরে ভেঙে আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়।

হ্যাঁ দিতে পারবেন।সাধারণত ছয় মাস বয়সের পর থেকেই পুষ্টিবিদরা  পিউরি আকারে মিষ্টি আলু বাচ্চাদেরকে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

হ্যাঁ বাচ্চাদেরকে সাদা ও পিঙ্ক মিষ্টি  আলু খাওয়ানো যাবে।বিশেষত ছয় মাস  বয়সের পর থেকেই আপনার সন্তানকে সাদা বা পিঙ্ক মিষ্টি আলু খাওয়াতে পারেন যা খুবই পুষ্টিকর।

৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে ছোট সাইজের একটি মিষ্টি আলুর অর্ধেক এবং ১ বছরের উপর থেকে ছোট সাইজের ১ টি মিষ্টি আলু বাচ্চাকে  সারাদিনে খাওয়াতে পারেন।

মিষ্টি আলু সাধারণত সুসহনীয় তবে যাদের শরীর মিষ্টি আলুতে সংবেদনশীল তাদের ক্ষেত্রে এলার্জি দেখা দিতে পারে তবে তা খুবই রেয়ার।

৮ থেকে ১০ মিনিট সিদ্ধ করলে মিষ্টি আলু গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫৮ থেকে ৬১ মধ্যে থাকে। আর ৩০মিনিট ধরে সিদ্ধ করলে ৪৪ থেকে ৪৬ এর মধ্যে থাকে।

source1: https://www.tataaig.com/knowledge-center/health-insurance/health-benefits-of-sweet-potato

source2: https://www.healthline.com/nutrition/sweet-potato-benefits

source3: https://www.webmd.com/food-recipes/benefits-sweet-potatoes

এই তথ্য শুধুমাত্র শিক্ষা এবং সচেতনতার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়। এটি কোনও স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার দ্বারা চিকিৎসার বিকল্প নয় এবং কোনও মেডিকেল অবস্থার নির্ণয় বা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। তথ্যের যথাযথতা নির্ধারণের জন্য এবং কোন ঔষধ গ্রহণের আগে পাঠকদের একজন নিবন্ধিত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। pustibd.com তথ্যের সঠিকতা, পর্যাপ্ততা, সম্পূর্ণতা, বৈধতা, নির্ভরযোগ্যতা বা উপযোগিতা সম্পর্কিত কোনও গ্যারান্টি বা ওয়্যারেন্টি (স্পষ্ট বা উহ্য) সরবরাহ করে না; এবং এর উদ্ভূত কোনও দায়বদ্ধতা অস্বীকার করে।

Similar Posts

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *